Menu

Sunday, December 15, 2019

ডায়েরি - ৪র্থ পর্ব (জান্নাতুল জান্নাত)
eGolpo Official

ডায়েরি - ৪র্থ পর্ব (জান্নাতুল জান্নাত)

কালো থাই গ্লাসের পর ভারি পর্দা ভেদ করা সূর্যের উষ্ণতার ছোঁয়ায় ঘুম ভাঙলো৷ ঘড়ির দিকে তাকাতে দেখি দুপুর ১টা বেজে ৩৫৷ কি ভাবছেন? আমাকে কেউ ডাকেনি কেন? ডাকবে কেন? আমি তো ঘুমানোর আগে দরজার বাইরে লিখে রেখেছিলাম৷
    "আমি একটু নিরিবিলি ঘুমাবো৷ কেউ বিরক্ত করবে না৷ খাওয়ার জন্যও নয়৷ আমার যখন ঘুম ভাঙবে তখন নিজেই খেতে যাবো৷"

ফ্রেশ হয়ে দরজা খুলে বাইরেটা দেখে আবার দরজা আটকে দিলাম৷ গতরাতের লেখাটা আবার লিখতে হবে৷ মাঝপথে থেমে গিয়েছিলাম৷ তার আগে মিষ্টি সকাল উপস মিষ্টি দুপুরের কাহিনীটা লিখি৷ এখানে যেহেতু আমার অতীত জীবনের কিছু আনন্দ দুঃখের কথা লিখবো তাই অন্য ডায়েরিতেই লিখি৷ মেয়েটা আবার এসব দেখলে কি না কি ভেবে বসে৷

৪ঠা আগস্ট, ২০১৫ (দুপুর ১ টা বেজে ৪৫)

ঔষধ খেয়ে ক্লিয়ার একটা ঘুমের পর দরজা খুলতেই সামনে দেখলাম পূজোর ফুল প্রসাদ রাখা৷ কেউ না বললেও আমি জানি এটা অনিতা রেখেছে৷ ছোট্ট মেয়েটা এ বয়সেই কি সুন্দর ঠাকুর পূজো করতে শিখে গেছে৷ ঠিক ঘরের বৌদের মতো ভোরে উঠে স্নান করে ধোয়া কাপড় পড়ে৷ তখন কেমন যেনো ওকে ট্রিপিক্যাল বউয়ের মতো লাগে৷ কখনো নিজ চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার৷ ছবি তুলে রেখেছিলো তনিমা৷ পরে সোশ্যাল মিডিয়াতে দিয়েছিলো তখন দেখেছিলাম৷ কি সুন্দর প্রতিমা আমার ঘরে৷ আসলে অনিতাকে এসব তনিমাই শিখিয়েছে৷ তনিমার পরিচয় দেয়া হয়নি৷

তনিমা তপুর মেয়ে৷ তপু আমার সিনিয়র৷ খুব ধার্মিক৷ তিন বার আহ্নিক করা টিপটপ ভদ্র ছেলে৷ চেহারায় কেমন যেনো মায়া৷ দেখলেই প্রেমে পড়ার মতো ছেলে৷ আমিও পড়েছিলাম প্রেমে৷ তবে সেটা বলিনি৷ দীর্ঘদিন দু'জন দু'জনকে দেখছি কিন্তু মনোবাসনার কথা আর বলা হয়ে উঠেনি৷ এক সকালে সরস্বতী পূজোতে দু'জন বসেছিলাম পাশাপাশি৷ আমি হলুদ রঙের শাড়ি আর ও পড়েছিলো হলুদ পাঞ্জাবী৷ সেদিন ঠাকুরের ফুল আমাকে দিয়ে বললো
   -তুমি কি সারাজীবন আমার অঞ্জলি দেয়ার সাথি হবে?
ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়েছিলাম সেদিন৷ এমন অদ্ভুতভাবে প্রোপোজ করতে কাউকে শুনিনি৷ কেউ কোনোদিন করেছে বলেও শুনিনি৷ কিছু না বলে এসে পড়েছিলাম বাসায়৷ সরস্বতী মা যে স্বয়ং ছিলেন সামনে৷ হ্যাঁ বা না কোনোটা বলার সাহস হলো না আমার৷ তারপর থেকে প্রতিদিন মায়ের ফুল আর প্রসাদ দিতো আমায়৷ এমন দু'টো জিনিস আমায় দিতো যা ফেরানোর ক্ষমতা আমার ছিলো না৷ আমার কেন কারোরই হয়তো থাকতো না৷ অবিশ্বাস করার মতো ওর মধ্যে কিছু ছিলো না৷ ওর চলাফেরা, ওর কথা, ওর দৃষ্টির সূক্ষ্মতা ও আচরণ সবকিছু আমাকে ওকে বিশ্বাস করাতে বাধ্য করেছিলো৷ তারপরও পরিবারের কথা ভেবে চুপ করে ছিলাম৷ জানতাম এর পরিণতি দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ কিন্তু কিভাবে যেনো জড়িয়ে পড়েছিলাম৷ সম্পর্ক এমন একটা বিষয় যেটাতে একবার জড়ালে আর বের হওয়া সম্ভব নয়৷ ঠিক গোলকধাঁধার মতো৷ যাতে প্রবেশের পথ আছে কিন্তু বেরুবার পথ নেই৷ বহুবার বের হওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি৷ মন থেকে কেন জানি মানতে পারছিলাম না যে সত্যিই তপু আমাকে নিয়ে ঘর বাঁধবে৷ বিশ্বাস যেমনি করতে পারছিলাম না তেমনি অবিশ্বাস করারও কোন কারণও খুঁজে পাচ্ছিলাম না৷

তপু আস্তে আস্তে আমার বন্ধুমহল, পরিবার, আত্মীয় স্বজন সবার পরিচিত ওর ভালোবাসার মানুষ হয়ে গেলো৷ মনের কোণে কোথায় যেনো জেগে উঠেছিলো অস্ফুট বাসনা হ্যাঁ আমি সঠিক লোককেই আমার জীবনে পেয়েছি৷ আরো একটি কাজ করেছিলো তপু যাতে ওর প্রতি বিশ্বাসটা আমার শতভাগ হয়েছিলো৷ একদিন সাঝবেলাতে এক কালী মন্দিরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম৷ হঠাৎ আমার হাত ধরে তপু বললো
   -এসো অঞ্জনা ভিতরে এসো৷
মন্দিরে ডেকেছে না তো করতে পারবো না৷ তাই ওর হাত ধরে ভিতরে প্রবেশ করলাম৷ কেউ ছিলো না তখন মন্দিরে৷ মায়ের সামনে থাকা সিঁদুর নিয়ে আমার সিঁথিতে পড়িয়ে দিলো তপু আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই৷
   -এ কি করলে তপু?
   -তোমায় আমি বাঁধলাম সখি আমারই বাঁধনে৷ আর পারবে না কখনো হারাতে৷ যা আমার ছিলো তা আমারই আছে, থাকবেও চিরকাল৷ এই বিশ্বাস অন্তরে খোদাই করে যেখানে খুশি সেখানেই যেতে পারবো আমি৷
   -কিন্তু এভাবে কেন করলে?
   -এ ছাড়া উপায় কি? তুমি তো আমায় অন্তর থেকে বিশ্বাস করতে পারোনি এখনও৷
   -হ্যাঁ পারিনি তাই বলে এভাবে?
   -ভয় নেই অঞ্জু আমি তোমাকে ছোঁবো না৷ স্বামীর অধিকার ফলাতে আসবো না৷ শুধু একটা অদৃশ্য বন্ধন দিলাম তোমায়৷ তুমি যেমন ছিলে তেমনই থাকবে শুধু যদি অন্য কারো হতে যাও তখন তোমার মনে পড়বে আমি তোমার স্বামী৷ আমি যে তোমায় কালী মায়ের সামনে সিঁদুর পড়িয়েছি৷ অস্বীকার করার ক্ষমতা কি তোমার আছে?
   -না, নেই৷
সত্যিই আমায় কখনো ছুঁয়েও দেখেনি তপু৷ বিশ্বাসটা হয়তো তাই বেশি গাঢ় হয়েছিলো৷

হঠাৎ বিয়ের জন্য তোড়জোড় শুরু করলেন বাবা৷ কোন উপায় না পেয়ে বাবাকে আমার আর তপুর সম্পর্কের কথা বললাম৷ বাবা নারাজ ছিলেন৷ কিন্তু তপু আমার পরিবারের অনেকেরই পছন্দের ছিলো৷ তাই বাবার না মতটা বেশি জোড়ালো হলো না৷ বাবাও রাজি হয়ে গেলেন৷ বললেন সামনের সপ্তাহে যেনো তপু বাবার সাথে দেখা করে বিয়ের কথা বলার জন্য৷

তারপর ওর বাবা মায়ের সাথে বিয়ের তারিখ ঠিক করতে৷ আমি তো তখন খুশির ভেলায় ভাসছি৷ মনে হচ্ছে মেঘের মতো উড়ছি৷ খবরটা জানালাম তপুকে৷ তপুও খুশি হলো৷ কবে বাসায় আসবে কথা বলতে তাও ঠিক করে ফেললো৷ তখন তো মোবাইলের এতো চল ছিলো না৷ বাবার ফোন দিয়ে কল করলাম তপুর এক দাদাকে কিন্তু তিনি বললেন গতকাল থেকে তপুর কোন খোঁজ নেই৷ এমনকি রুমেও যায়নি৷ শুনে খুব অবাক হলাম৷
    "ও তো ভার্সিটিতেও আসেনি৷ তাহলে কি বাড়িতে কোন বিপদ হলো?"
কিন্তু কি করে খবর নিবো আমি তো কারো ঠিকানা জানি না৷ ওর বাড়ির ঠিকানা জানি কিন্তু সেখানে উপস্থিত হওয়া তো সম্ভব নয়৷ পরে ভাবলাম হয়তো কোন সমস্যায় আছে পরে হয়তো যোগাযোগ করবে৷ তারপর দেখা করার দিনও পেরিয়ে গেলো তপু আর ফিরে এলো না৷ শুধু আমি কেন আমার পরিচিত কারো সাথেই ওর কোন যোগাযোগ নেই৷ হঠাৎই যেনো চেনা জগতের বাইরে চলে গেলো সে৷

তপুর খুব ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের খবর পেলাম৷ দেখা করলাম তাদের সাথে৷ যা শুনলাম তারপর আমি চেয়েছিলাম বসুন্ধরা দ্বিখন্ডিত হোক আর আমি তোমাতে বিলুপ্ত হই৷ কিছুতেই তাদের বলা কথাগুলোকে সেদিন বিশ্বাস করতে পারিনি আবার অবিশ্বাস করারও জোরালো কারণ পাইনি৷ বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দোলাচলে দুলছিলাম আমি৷ পেরিয়ে গেলো আরো কিছুদিন৷ তপুর সেই বন্ধু বললো আমি যেনো তপুকে ভুলে নতুন জীবন শুরু করি৷ তপুর আশায় বসে থাকলে আমার শুধু সময়ই নষ্ট হবে৷ তাকে তখন কি করে বলতাম আমি যে তখনও তপুর নামে সিঁথিতে সিঁদুর পড়ি সবার অলক্ষ্যে৷ আমাদের বিয়ের সাক্ষী তো নেই কেউ৷ তার চেয়েও বড় কথা এক মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ের সংসার কি করে ভাঙি? বাসায় এসে দরজা আটকে দিলাম৷ যতটা সিঁদুর ছিলো আমার কাছে সবটুকু সিঁথিপাটিতে ঢেলে দিলাম৷ তারপর ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে রইলাম৷ সিঁদুরগুলো ধুয়ে ধুয়ে পড়ছিলো৷ বাথরুম লাল হয়ে গেলো আমি একটুও নড়িনি৷ তারপর চুলে শ্যাম্পু করে সিঁদুরের সবটুকু আভা সিঁথি থেকে ধুয়ে মুছে জীবন থেকে তপু নামটাকে বিদায় দিয়ে বাথরুম থেকে বেরুলাম৷

অবাক লাগছে আমার কান্ড দেখে? হ্যাঁ, তপু আসলে বিবাহিত ছিলো৷ অনেক আগেই ও বিয়ে করেছিলো৷ সাথে ছিলো ওর এক ফুটফুটে কণ্যাসন্তান৷ এক বিয়ে থাকাকালীন ২য় বিয়ের অস্তিত্ব নেই আর যেটার কোন সাক্ষ্যপ্রমাণও নেই৷ আমি তো একটা মেয়ে আর মেয়ে হয়ে কি করে অন্যের স্বামীকে কেড়ে নিতাম? আমি যদি এখন বিয়ের কথা বলি তাহলে সবাই ভাববে মিথ্যে বলছি৷ আর তপু? তপুও তো আমাকে আর স্বীকার করবে না৷ সরে এলাম তপুর জীবন থেকে৷ প্রথমে খুব কষ্ট হতো মনে হতো কেউ আমার কলিজাটা নিয়ে গেছে কিন্তু আস্তে আস্তে মানিয়ে নিয়েছিলাম৷ তপু আর আমার সামনে পড়েনি কখনও৷ সামনে পড়লে একটা কথাই জানতে চাইতাম কেন আমার সাথে এমন করলো? কি লাভ হলো ওর এতে? আমার মন ভাঙলো৷ যখন ও বিবাহিতই ছিলো তবে আমার সিঁথিতে কেন সেদিন সিঁদুর পড়ালো? কেন করলো এই সিঁদুরের সাথে এই খেলা? সৃষ্টিকর্তাকে এতো ভালোবাসে তার ভয়ও কি হয়নি ওর?

এরপর থেকে পরিবারের কেউ তপুর কথা বললেই আমি বারবার এড়িয়ে যেতাম৷ হয়তো তারাও ততদিনে বুঝে গেছে আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা আর নেই৷ বাবা সুব্রতর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করলো৷ বাঁধা দেয়ার কোন কারণই ছিলো না৷ সুব্রতর সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেলো৷ বিয়ের সাতবছর পর তপুর সাথে আমার দেখা রাস্তায়৷ খুব ইচ্ছে ছিলো ওর পাঞ্জাবী ধরে বলি
    "কেন আমাকে ঠকালে তপু? কেন আমাকে তনিমার মা হতে দিলে না? কেন তনিমা অন্য কারো মেয়ে হলো?"
কিন্তু কিছু বলিনি কারণ তপুর হাত ধরা ছিলো বারো বছরের একটি মেয়ে৷ এই সেই মেয়ে তনিমা, যার মা আমি হবো বলেছিলো তপু কিন্তু হলো অন্য কেউ৷ স্বাভাবিক কথোপকথন হলো আমাদের মধ্যে
   -কেমন আছো? তোমার মেয়ে তনিমা?
   -এই তো চলে যাচ্ছে৷ হ্যাঁ আমার মেয়ে তনিমা৷
   -তুমি ঢাকাতেই থাকছো আজকাল?
   -না৷ ওর মা মারা গেছে৷ মেয়ে মানুষ কে দেখে শুনে রাখবে তাই হোস্টেলে দিতে এসেছি৷
   -আমরা কফি খেতে খেতে কথা বলতে পারি৷ সামনের কফিশপটাতে বসি চলো৷

তিনজনই কফিশপে বসলাম৷ তনিমার চেহারাটা খুব মায়াবী৷ আজ তপুর সাথে আমার বিয়ে হলে তনিমা আমাদেরই মেয়ে হতো৷ ভাবতে ভাবতে কফির অর্ডার দিয়ে তপুকে বললাম
   -হোস্টেলে কেন রাখতে চাও ওকে? হোস্টেলে কত কষ্ট হয়৷ কোন আত্মীয়ের বাসায় রাখতে পারো৷
   -না৷ তেমন কোন আত্মীয় নেই তো আমার৷
তনিমার দিকে তাকিয়ে বললাম
   -আমি তোমার বাবার বান্ধবী৷ আমার সাথে আমার বাসায় থাকবে? আমার এক মেয়ে আছে ৫ বছরের আর এক ছেলে আছে ৩ বছরের৷ তুমি ওদের দিদির মতো হয়ে থাকবে৷ আজ থেকে জানবো আমার ৩টি সন্তান৷ কখনো অন্য দৃষ্টিতে দেখবো না৷ তবে আমি ব্যস্ত থাকি৷ আমাকে তেমন একটা পাবে না তুমি৷ অনিতা আর অর্ণবকে নিয়ে তোমার সময় কেটে যাবে৷ থাকবে?
তনিমা কিছু না বলে তপুর দিকে তাকালো৷
   -তোমার স্বামী কিছু বলবে না অঞ্জু?
   -সেটা আমার বিষয়৷ তুমি রাজি কিনা বলো?
   -তোমার প্রতি আমার ভরসা ও বিশ্বাস দু'টোই আছে৷ আমি জানি আমার মেয়েকে তুমি নিজ মেয়ে ভিন্ন অন্যকিছু ভাববে না৷
   -এইটুকু বিশ্বাস যেহেতু এখনও অবশিষ্ট আছে তাতেই আমি সন্তুষ্ট৷ তুমি কি এখন যাবে আমার সাথে?
   -না, তনিমাকে নিয়ে যাও৷ আমি অন্য কোন সময় যাবো৷ তনিমা তুই তোর অঞ্জনা মাসির সাথে...
   -তপু ওকে মাসি নয় মা বলতে বলো৷
   -আমি তোমায় মামনি বলবো৷ ঠিক আছে?
   -আচ্ছা৷ তপু আমার হাতে সময় নেই৷ আমি আপাতত তনিমাকে বাসায় রেখে কাজে যাই৷
   -আচ্ছা যাও তোমরা৷ ভালো থাকিস মা৷
   -ভালো থেকো তপু৷
সেই থেকে তনিমা আমার সাথে থাকে আমার আরেকটা সন্তানের মতো৷

ডায়েরিটা বন্ধ করে দীর্ঘনিশ্বাস ফেললাম৷  হায়রে জীবন কখন যে কি খেলা করিস বোঝার সাধ্য কার আছে? অনেক সময় নষ্ট করলাম এখন স্নান সেরে খেয়ে আবার শ্যুটিংএ যেতে হবে৷ তনিমা নিশ্চয়ই কলেজ থেকে ফিরেছে এতোক্ষণে৷ যাই স্নান সেরে দেখা করি৷
চলবে......


প্রিয় পাঠক বন্ধুরা , আমি 'জান্নাতুল জান্নাত' । একজন লেখিকা। সবসময় চেষ্টা করি ভালো লেখা উপহার দেওয়া জন্য। আশা করি পড়লে আশাহত হবেন না৷ আমার লেখা নিয়ে আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানান।
ফেসবুকে আমি
sq-sample29
জান্নাতুল জান্নাত
Continue reading →
ডায়েরি - ৩য় পর্ব (জান্নাতুল জান্নাত)
eGolpo Official

ডায়েরি - ৩য় পর্ব (জান্নাতুল জান্নাত)

কফিতে চুমুক দিতে দিতে দরজা খুলে বারান্দায় গেলাম৷ রাত প্রায় দু'টো৷ শেষ কবে জ্যোৎস্না দেখেছিলাম আর প্রকৃতি দেখেছিলাম ভুলে গিয়েছি৷ আজ বোধ হয় পূর্ণিমা৷ তবে ভরা পূর্ণিমা নয়৷ কিন্তু চাঁদটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে৷ কেন এতো সুন্দর লাগছে তা বুঝতে পারছি না৷ আজকের মতো এতো মুগ্ধতা নিয়ে কখনো চাঁদকে দেখিনি৷ এ চাঁদকে নিয়ে লেখা হয়েছে কত কবিতা, কত গান, কত গল্প কিন্তু তার জন্য এর কোনো অহমিকা নেই৷ এতো সুন্দর হওয়া সত্বেও চাঁদের গায়ে কলঙ্ক সেখানে আমরা সাধারণ মানুষ কি? কলঙ্ক তো আমাদের নিত্যসাথী৷

সুব্রত ছেলে হিসেবে খারাপ নয়৷ সুব্রতর না হয় একটু মেয়েদের প্রতি ঝোঁক আছে৷ মাঝেমধ্যে একেকজনকে নিয়ে একেক জায়গায় থাকে৷ তাতে কি? ওর তো টাকা আছে৷ ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে এটা কিছু নয়৷ এমন হতেই পারে৷ এটা স্বাভাবিক বিষয় যেমনি আমাদের ক্ষিধে পায়, জল তেষ্টা পায় তেমনি৷ বরং এমন না হওয়াটাই অস্বাভাবিক৷ একটু ড্রিংকস করে৷ এটাও কোন দোষের নয়৷ নিজের স্ট্যাটাস বোঝাতে কয়েকটি বিষয় নিজের মধ্যে রাখা উচিত তার মধ্যে ড্রিংকস এক নম্বরে৷ ড্রিংকস, মেয়ে লোক, কুকুর পোষা, মাঝে মধ্যে বাইরে রাত কাটানো কমন বিষয়৷ এর জন্য ওকে খারাপ বলা চলে না৷ তাই এসব জেনেও বাবা আপত্তি করেননি বিয়েতে৷ মেয়েতো রানীর হালে থাকবে৷ তবে তার মেয়েটাকেও যে টাকা উপার্জনের মেশিন হতে হবে তা হয়তো তিনি বোঝেননি৷ যা হোক তাকে দোষ দেবো না৷ ভাগ্য তো ভাগ্যবিধাতাই লিখেছেন৷ হয়তো এমনটাই তার ইচ্ছে ছিলো৷

তাছাড়া বাহির থেকে দেখে মানুষ যদি চেনা যেতো দিনের পর দিন এতো মানুষ ঠকতো না৷ মানুষের চেহারার আড়ালে অমানুষগুলোকে চেনার যদি কোন মেশিন তৈরি হতো৷ তাহলে হয়তো পৃথিবীতে মানুষ খুঁজে পাওয়াই দায় হতো৷ ভাগ্যিস এমন কোন মেশিন আজও তৈরি হয়নি৷ পৃথিবীতে শুধু মানুষ নামক প্রাণীগুলোই এমন৷ দেখতে মানুষের মতো হলেও আসলে এরা সবাই মানুষ নয়৷ কিন্তু পৃথিবীর সব কুকুর, বিড়াল, গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল সব এক৷ উফফ পাঁচটা নরিয়াম খেলাম তারপরও কেন ঘুম আসছে না? শুনেছি তরল কিছুর সাথে মিশিয়ে খেলে তাড়াতাড়ি ঘুম আসে৷ আমি তো কফিতেই মিশিয়ে খেলাম৷ ছবিতে অভিনয়ের সময় খাওয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ার অভিনয় করি৷ আহ্ অভিনয়ের মধ্যেও যেনো অভিনয়৷ এই ছোট্ট বিষয়টাই যেখানে বাস্তবের সাথে মিলে না বড় বিষয়গুলো আর কি করে মিলবে?

আজ আমার মনে হয় পাঁচটাতে আর হচ্ছে না৷ আরো পাঁচটা ট্যাবলেট কফির সাথে মিশিয়ে স্ট্যাডিরুমে বসে খেতে লাগলাম৷ আবারও ডায়েরি বের করলাম৷ তবে এবার অন্য একটা৷ আসলে কথায় কথায় একদিন অঞ্জনদাকে বলেছিলাম আমার ডায়েরি লেখার খুব শখ৷ তারপর থেকে প্রায়ই তিনি আমাকে ডায়েরি আর কলম গিফট করতেন৷ অনেকগুলো ডায়েরি জমেছে৷ ভাবছি সবগুলোতেই আলাদা আলাদা বিষয় নিয়ে লিখবো৷ ক্যানাডা থেকে আনা দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম দু'টো চল্লিশ বেজেছে৷

রাত ২টা বেজে ৪০ মিনিট৷ সমস্ত পৃথিবী ঘুমিয়ে আছে৷ তবে কিছু নিশিকণ্যারা তাদের উপার্জনের পথ খুঁজছে৷ আমিও তাদের থেকে আলাদা নই৷ পার্থক্য তারা নিশিকণ্যা আর আমি দিবাকণ্যা৷ উপস আরো পার্থক্য আছে তাদের সমাজ খারাপ দৃষ্টিতে দেখে আর আমাকে সমাজ ভালো দৃষ্টিতে দেখে৷ আচ্ছা তার আর আমার কাজে কোন পার্থক্য আছে? নেই তো৷ তারা হাতে গোণা কয়েকজনকে আনন্দ দেয় আর আমরা দেই অগুণিত লোককে৷ তারা করে সস্তার মেকআপ আর আমি করি ব্রান্ডেড মেকআপ৷ যে কাজ করে সে পতিতা সেই একই কাজ করে আমি সেলিব্রেটি৷ তাকে দেখে লোকে নাক কুচকায় আর আমাকে দেখে অটোগ্রাফ চায়৷ আমিও অটোগ্রাফ প্রার্থীদের হতাশ করিনা৷ ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকুক অঘোষিত পতিতার নাম৷

আজ থেকে কয়েক বছর পর যদি কেউ এটা পড়ে আমাকে থু থু দিবে৷ নিজেকে পতিতা বলছি বলে৷ আমি কি পতিতা নাকি? তারা জানে না আমি কি৷ কিন্তু প্রতিটি অঞ্জনা জানে তাদের রক্ষণশীল অঞ্জনা থেকে সেলিব্রেটি অঞ্জনা হয়ে উঠার গল্প৷ লিখে রাখছি হয়তো আমাকে দেখে আমার আট বছরের মেয়ে অনিতাও চাইবে সেলিব্রেটি হতে কিন্তু আমি চাই ও এই ডায়েরি পড়ুক৷ ও জানুক অঞ্জনারা শুধু অঞ্জনা নয় আরো বেশি কিছু৷ আজ আমাকে আমার সন্তান টিভিতে দেখে চিনে৷ টিভির পর্দাতে আমি সেরা মায়ের পুরষ্কার পাই অথচ আমার সন্তানদের আমি কোনদিন মুখে তুলে খাইয়ে দেইনি৷ একবার আমার সন্তানকে জিজ্ঞেস করুক উত্তর পেয়ে যাবে এ পৃথিবী আমি আসলে মা হিসেবে কতটা ব্যর্থ৷ আমার সন্তান আমাকে দেখে টিভির পর্দায় অন্য কোন বাচ্চাকে আদর করতে, অন্য কোন পুরুষের বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে, অন্য পুরুষকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকার কথা বলতে শোনে৷ এগুলো কি ওর মনে একটুও আঁচড় কাটে না? ছবিতে বিবাহবার্ষিকী পালন করতে দেখে অথচ আমার বাস্তব বিবাহবার্ষিকী কবে সেটা আমি ভুলে গেছি৷ ওরা জানেনা ওদের বাবা মা শেষ কবে একসাথে হেসেছিলো৷ আমি যে পরিবেশে বড় হয়েছি তার সম্পূর্ণ উল্টোটা পাচ্ছে আমার ছেলে মেয়ে৷

অনিতা আর অর্ণব তোদের জন্যই এ ডায়েরি৷ তোদের দু'জনেরই নাম আমি ইচ্ছে করে আমার সাথে মিলিয়ে রেখেছি৷ ঐ লোকটার ছায়াও তোদের জীবনে দেখতে চাই না৷ জানি এটার পড়ার পর আমাকে তোরা খুব ঘৃণা করবি তবুও তো ভালো মন্দ বিচারটা শিখতে পারবি৷ আমার মতো তোরা নিজেকে ধ্বংসের পথে দিবি না৷ আমি তোদের বড্ড ভালোবাসি কিন্তু প্রকাশ করতে পারি না৷ বিশ্বাস কর অনিতা আমি যখন অভিনয়ে কোন বাচ্চাকে খাইয়ে দেই, আদর করি তোদের খুব মিস করি৷ তোদের আমি সেভাবে কোনদিন আদর করতে পারিনি৷ জম্ম ঠিকই দিয়েছি কিন্তু মা আর হয়ে উঠতে পারিনি৷ বিশ্বাস কর এতে আমার কোন হাত ছিলো না৷

তোরা তো নিষ্পাপ তোদের কাছে যেতে আমার নিজের ইতস্তত লাগতো৷ যদি আমার পাপগুলো তোদের গায়ে লাগে৷ আমি তো নোংরা হয়ে গেছি৷ এই নোংরাগুলো তোদের গায়ে লাগাতে চাই না তাই দূরে থাকি৷ তোরা কি জানিস তোরা যখন ঘুমিয়ে থাকিস আমি তখন তোদের কাছে যাই৷ ঘন্টার পর ঘন্টা তোদের দেখি ৷ খুব ইচ্ছে করে তোদের জড়িয়ে ধরি৷ তোরা আর তোদের বাবাকে নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে যাবো৷ ধর সমুদ্রে কিংবা পাহাড়ে৷ কাজের সূত্রে তো কত জায়াগাতেই যাই কিন্তু মন পড়ে থাকে তোদের কাছে৷ আমার গর্ভজাত সন্তানদের একটু একটু করে বড় হওয়াটা আমি দেখতে পারিনি৷ যখন তোরা ছোট সকালে বাসা থেকে বেরুনোর সময় তোরা ঘুমিয়ে থাকতি আবার বাসায় ফিরে দেখতাম ঘুমিয়ে পড়েছিস৷ তোদের কি দোষ? বাচ্চারা অতো রাত অব্ধি জেগে থাকতে পারে নাকি? অনিতা মারে একটু যখন বড় হলি মানে কার্টুন দেখার বয়স হলো তখন তুই নাকি একদমই কার্টুন দেখতি না৷ সারাদিন নাকি মাম্মামের ছবি দেখবি৷ সারাদিন আমার ছবির সিডি চলতো বাসায়৷ আমার ছবি হাতে নিয়ে ঘুমাতি৷ আমি এসে দেখতাম৷ খুব কাঁদতাম তোকে সময় দিতে পারতাম না বলে৷ জানিস ওখানে যারা অভিনয় করতো অনেকেই আসতো যেতো কিন্তু আমি যেনো বাঁধা লোক৷ আসতেই পারতাম না৷ তোর প্রতি জম্মদিনে কখনো হাজার টাকার কখনো লাখটাকার উপহারও তোকে দিয়েছি৷ তুইও হেসেছিস কিন্তু আমি জানি সে হাসিতে প্রাণ ছিলো না৷ কোনদিনই আমি নিজ হাতে তোকে উপহার দিতে পারিনি৷ তোর বিছানার পাশে রেখেছি৷ ঘুম থেকে উঠে দেখেছিস৷ হয়তো দেখেই ছুটে এসেছিলি আমাকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু সেখানে পেতি শুধু আমার রাতের বাসি কাপড়৷

আমার খুব ইচ্ছে করে তোর জম্মদিনটা খুব বড় করে করবো৷ ঠিক করেছি তোর দশ বছরের জম্মদিনটাই করবো৷ তোর বাবা হয়তো সেদিনও থাকবে না কারণ তোর বাবা কখন কোথায় থাকে তার নিশ্চয়তা নেই৷ আমি নিজে হাত ধরে তোর সাথে কেক কাটবো প্রথম কেক আমি তোকে খাওয়াবো আর পায়েস রাঁধবো তোর জন্য আর সেটা নিজের হাতে খাইয়ে দিবো৷ তুই জানিস না প্রতিবছর তুই যে পায়েসটা খেতি সেটা আমি রাধতাম৷ ঘৃণা করিস না মা, আমি স্নান করে ঠাকুর পূজো করে তবেই রাধতাম৷ জানি পুরোপুরি পবিত্র হতে পারতাম না কিন্তু যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি৷

আমার উপার্জনের একটা বড় অংশ তোর বাবা নিয়ে যায় তারপরও তোদের দুই ভাইবোনের জন্য আমি টাকা লুকিয়ে রাখি৷ পাপের টাকা বলে ফেলে দিসনা৷ ব্যাংকে রাখলে ঝামেলা তাই ব্যাংকে নয় আমার এই গোপন কুঠুরিতে রাখি৷ তোকে একদিন আমার এই গোপন কুঠুরির সন্ধান দিবো৷ তুই যখন আরেকটু বড় হবি সবকিছু বুঝবি তখন জানতে পারবি৷ তুই বড় অর্ণব ছোট তাই অর্ণবের বিষয়টাও তোর দেখতে হবে৷ তোদের আমি এ দেশে রাখবো না৷ বিদেশ পাঠিয়ে দিবো৷ সুব্রত এর কোন ছায়া আমি তোদের গায়ে পড়তে দিবো না৷ আমি জীবনে যা পারিনি তোরা তা পারবি৷ তোকে পারতে হবে মা৷ আমার এই বারোটা বছরের চোখের পানির দাম তোর বাবার থেকে আদায় করতে হবে৷ বল না মা পারবি না? তোকে আরো অনেককিছু লেখার আছে৷ অন্যকোনদিন লিখবো৷ হাতটা কাঁপছে, চোখে ঝাপসা দেখছি৷ হ্যাঁ ঔষধে কাজ করা শুরু করেছে........
চলবে......


প্রিয় পাঠক বন্ধুরা , আমি 'জান্নাতুল জান্নাত' । একজন লেখিকা। সবসময় চেষ্টা করি ভালো লেখা উপহার দেওয়া জন্য। আশা করি পড়লে আশাহত হবেন না৷ আমার লেখা নিয়ে আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানান।
ফেসবুকে আমি
sq-sample29
জান্নাতুল জান্নাত
Continue reading →

Saturday, December 14, 2019

ডায়েরি - ২য় পর্ব (জান্নাতুল জান্নাত)
eGolpo Official

ডায়েরি - ২য় পর্ব (জান্নাতুল জান্নাত)

রাত সাড়ে বারোটায় ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরলাম৷ ততক্ষণে অনিতা আর অর্নব ঘুমিয়ে পড়েছে৷ বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি ফোনে আলাপ আলোচনা করে চলেছেন শ্যুটিংএর সিডিউলের বিষয়ে৷ কান পেতে সেটা শুনে নিলাম৷ শ্বাশুড়িকে আমার হাফ পি.এ. বলা চলে৷ একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে স্বামীর কক্ষে গেলাম৷ নাহ্ রুটিনের কোন পরিবর্তন হয়নি৷ আজও বেশ কয়েক পেগ হুইস্কি নিয়েছে মনে হয়৷ বাহিরের পোশাকে সোফার উপর অর্ধেক শরীর দিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে৷ বিরক্তকর লোক একটা৷ একবার ভাবলাম এগিয়ে গিয়ে বিছানায় তুলে দিবো আর পোশাক বদলে দিবো কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম কি লাভ এসব করে? দু'টো নষ্ট শরীরের নষ্ট মানুষগুলো আলাদা থাকাই ভালো৷ পোশাক পাল্টে টেবিলে রাখা স্যালাড খেয়ে রান্নাঘরে গেলাম কফি বানাতে৷ ফ্লাক্সে কফি নিয়ে চলে গেলাম স্ট্যাডি রুমে৷ দরজা আটকে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে গোপন কুঠুরি থেকে ডায়েরি বের করে লিখতে বসলাম৷

২রা আগস্ট রাত দেড়টা যদিও হিসেব মতো এখন ৩রা আগস্ট৷

অঞ্জনদা জম্মদিনে আমাকে ডায়েরি দিয়েছেন৷ শুধু কি ডায়েরি? আমার এই অভিনয় জীবনের সবকিছুই তার দেয়া৷ আর অঞ্জনদা? অঞ্জনদার হাতে আমাকে সমর্পন করেছেন আমার স্বামী সুব্রত রায় চৌধুরী৷ হ্যাঁ, আমি এই রায় চৌধুরী বাড়ির বৌ৷ দশ বছর আগে এই লোকটার হাতে বাবা আমাকে সমর্পন করেছিলেন৷ আমার ভালো মন্দ ইজ্জত সব তার হাতে৷ রক্তরঙা লাল সিঁদুর পড়িয়েছিলেন লোকটা আমার সিঁথিতে৷ সিঁদুর সেদিন সিঁথির চেয়ে নাকের উপরই বেশি পড়েছিলো৷ সবাই বলেছিলো স্বামী সোহাগী হবো৷ হ্যাঁ হয়েছি তো! নাহলে কি আর অঞ্জনদার মতো মানুষের হাতে সমর্পন করে আমাকে? পৃথিবীতে ক'জন স্বামী আছে স্ত্রীকে সমর্পন করতে পারে৷ এদিক থেকে আমি পরমা ভাগ্যবতী বটে৷

এই দশ বছরে আর কখনো সুব্রত আমায় সিঁদুর পড়িয়েছে বলে মনে পড়েনা৷ হয়তো স্মৃতিভ্রম হয়েছে আমার৷ আমার রিসিপশন অনুষ্ঠানটা বেশ বড় করে হয়েছিলো৷ ব্যবসায়ী স্বামী দেশবিদেশে তার কত পরিচিত লোক আছে সবাইকে ইনভাইট করেছিলেন সেদিন৷ অবাক করা বিষয় ছিলো সেদিন কিন্তু আমি বেনারসি পড়ে ট্রিপিক্যাল বউয়ের মতো সাজিনি৷ সেদিন পার্টি পোশাক আর পার্টি মেকআপ নিয়েছিলাম৷ বান্ধবীদের থেকে শুনেছিলাম বিয়ের পর নাকি সবসময় শাড়ি পড়ে থাকতে হয় কিন্তু আমার বেলায় হলো উল্টো৷ আমি কিন্তু বেশ উপভোগ করেছিলাম বিষয়টা৷ কয়টা মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে আমার মতো স্বাধীনতা পায়? খুব ভালোভাবেই পার্টিটা উতরে গেলো৷

স্বামী আমার মহা ব্যস্ত মানুষ৷ প্রতিরাতে বাসায় ফেরারও সময় হয় না৷ বিয়ের পর যখন আমাকে অষ্টমঙ্গলা নিয়ে গিয়েছিলো তখন ঘন্টাকয়েক পরেই নিয়ম শেষ হতেই এসে পড়েছিলো সুব্রত৷ দু'দিন পর আমার বাসায় গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলো ফেরার জন্য৷ আমি বাসায় ফিরে অবাক৷ বাসায় অনেক অতিথি৷ কই সুব্রত কিছু বললো না আমাকে৷ যা হোক অতিথিদের সাথে কুশলাদি বিনিময়ের পর জানলাম অঞ্জন দত্ত একজন প্রডিউসর৷ আমাকে তার খুব পছন্দ হয়েছে৷ তিনি আমাকে অভিনয়ে নিতে চান৷ আমি বোবা পুতুলের মতো শুধু শুনছিলাম৷ কিছুই বুঝতে পারিনি তখন৷ আমি করবো অভিনয়? কোনোদিন কল্পনাও করিনি৷ রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হওয়ার জন্য এসবের চিন্তা কোনদিন মাথায় আনতেও ভয় পেয়েছি৷ তারমধ্যে আমার সদ্য বিয়ে হয়েছে৷ স্বামী শ্বাশুড়ি নিশ্চয়ই চাইবেন না তাদের ঘরের বউ অভিনয়ে নামুক৷ এসব ভাবতে ভাবতে তাদের কথাগুলো প্রথমে শোনা হয়নি কিন্তু পরের কথাগুলো শুনে বুঝলাম আমার শ্বাশুড়িমা ভীষণ খুশি হয়েছেন অঞ্জনদার এ প্রস্তাবে৷ স্বামীর দিকে তাকিয়ে বুঝলাম ইনি তো মহাখুশি৷ আমারও বেশ ভালো লাগলো৷ খুব ভালো শ্বশুরবাড়ি পেয়েছি৷ সত্যিই এদের তুলনা হয় না৷ কিন্তু দ্বিমত পোষণ করে অঞ্জনদাকে বললাম আমি তো এসব কখনো করিনি কোন অভিজ্ঞতা নেই৷ আপনি বিপদে পড়ে যেতে পারেন আমাকে নিয়ে৷ তিনি বললেন "আমি জানি আপনি আগে কখনো অভিনয় করেননি৷ তাতে সমস্যা নেই৷ আমি ও আমার দল আপনাকে গড়েপিঠে নিবো৷"

আমার যে খুশি আর ধরে না৷ আহ্ আমি নায়িকা হবো!!! কন্ট্রাক্ট পেপার রেখে অঞ্জনদা সেদিনের মতো চলে গেলেন৷ একদিন সময় দিয়ে গেলেন সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য৷ পরেরদিন আসতেই খুশিমনে কন্ট্রাক্ট পেপার না পড়েই সিগনেচার করে দিলাম৷ স্বামী পাশে থাকলে ভয় কি!! তাছাড়া অঞ্জনদা তো সুব্রতর পরিচিতই৷

আগেই বলেছি আমার বয়সের চেয়ে পরিপক্কতা কম তাই অনেককিছু তখন বুঝিনি৷ কিন্তু আস্তে আস্তে বুঝে গেছি৷ যখন বুঝেছি তখন জড়িয়ে গিয়েছি আষ্ট্রেপৃষ্ঠে৷ বেরুবার উপায় নেই আর৷

১৮ই এপ্রিল ২০০৫ আমাকে প্রথমবারের মতো আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় অভিনয়ের জন্য৷ স্ক্রীপ্ট কয়েকদিন আগেই দিয়েছিলো কিন্তু কিছুই মনে থাকে না৷ বারবার শুধু ভুলে যাই৷ ভয়ে হাত পা অসাড় হয়ে আসে৷ ভেবেছিলাম সুব্রত যাবে আমার সাথে কিন্তু ওর নাকি অফিসে অনেক কাজ তাই যেতে পারেনি৷ অঞ্জনদা আমাকে নেয়ার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিলেন৷ যদিও স্ক্রীপ্টগুলো মুখস্ত হয়নি৷ অঞ্জনদা নিজেই বারবার দেখিয়ে দিয়ে বারবার কেটে কেটে অল্প অল্প করে শট নিচ্ছিলেন৷ আমার বিপরীতে অভিনয় করেছিলো একজন মুসলিম৷ নাম তার নাবিদ ইসলাম৷ উনি পাকা অভিনেতা৷ বেশ বন্ধুভাবাপন্ন৷ ভালোই লাগছিলো তার সাথে কাজ করতে৷ অন্তরঙ্গ তেমন কিছু তখনও আসেনি৷ সপ্তাহ্ খানিক পর দাদা বললেন এখন কয়েকদিন গানের শ্যুট হবে৷ আর যেহেতু ছবিতে বিয়ে আর হানিমুনের বিষয়টা আছে তাই আমাদের পুরো টিমকে দেশের বাইরে যেতে হবে শ্যুটিং করতে৷ ভেবেছিলাম বাহিরে হয়তো যেতে দিবে না সুব্রত কিন্তু সুব্রত কোন বাঁধাই দিলো না৷ অঞ্জনদা যেনো আমাদের ঘরের লোক৷ যেহেতু সুব্রত ব্যস্ত মানুষ তাই শ্বাশুড়িকে অনুরোধ করলাম আমার সাথে যেতে কিন্তু রাজি হলেন না তিনি৷ এতোগুলো অপরিচিত লোকের সাথে দেশের বাহিরে যাবো তাও প্রায় পনেরো বিশদিনের জন্য ভাবতেই গা শিউরে উঠছে৷ কিন্তু অঞ্জনদা আছে ভেবে রাজি হলাম৷

আগে শুনেছিলাম অভিনয়ের মধ্যে জড়িয়ে ধরার বিষয়গুলো নাকি ক্যামেরার কারসাজি কিন্তু অভিনয় করতে গিয়ে বুঝলাম মোটেও ক্যামেরার কারসাজি নয় বরং সবটাই বাস্তব আর অতিমাত্রায় বাস্তব৷ শর্ট ড্রেস পড়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো, শরীরের এখানে সেখানে হাত দিয়ে, কখনো জড়িয়ে, বিভিন্ন অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে বারবার পিছিয়ে আসছিলাম৷ বারবার দাদাকে কাট বলতে হচ্ছিলো আমার ইতস্ততার জন্য৷ ক্লোজ দৃশ্যগুলো কিছুতেই করতে পারছিলাম না৷ সেদিনই প্রথম অঞ্জনদার চোখে রাগ দেখেছিলাম৷ খুব রাগারাগি করেছিলেন সেদিন৷ নাবিদ ইসলাম তো রেগে চলেই গিয়েছেন শ্যুটিং স্পট ছেড়ে৷ তখনকার মতো আমিও রুমে চলে আসি৷ খুব কেঁদেছিলাম৷

রাত ন'টায় আমাকে অঞ্জনদা তার রুমে ডেকে পাঠালেন৷ ভয়ে ভয়ে গেলাম৷ যেতেই বললেন
   -তোমার সমস্যা কি?
   -দাদা ঐ দৃশ্যগুলোতে উনি আমার গায়ে হাত দিচ্ছিলেন তাই...
   -তাই কি? তাই বলে তুমি সরে যাবে? এটা অভিনয় আর এটুকু তো তোমাকে করতেই হবে৷ আচ্ছা বাদ দাও বুঝলাম আজ তোমার এটুকুতেই খারাপ লাগছে কিন্তু এরপর যখন আরো অন্তরঙ্গ দৃশ্য দিবো তখন? তখনও পালাবে?
   -দাদা আমি এসব করতে পারবো না৷ আপনি আমার বদলে অন্য কাউকে দেখুন৷
   -আরে বলে কি মেয়ে? পাগল নাকি? কিছুতেই না৷ আমার মার্কেটিং হয়ে গেছে৷ এখন আমি সব শেষ করতে পারবো না৷ আর তুমি আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ৷ এসব লাইনের ভাষা এখনও বোঝো না হয়তো তুমি৷ সুব্রত তোমাকে কিছু বলেনি? আর সুব্রত কি বলবে কন্ট্রাক্ট পেপারে তো সব লেখা ছিলো৷ তুমি পড়োনি? এখন এসব কথা আসছে কোথা থেকে?
   -না আমি তো পড়িনি৷
   -বোকা মেয়ে বলে কি! তুমি না পড়ে সিগনেচার করেছো? আমি তো তোমার বাসায় রেখে এসেছিলাম তুমি যাতে পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারো তাই৷
   -আমি পড়িনি৷ কি লেখা ছিলো সেটাতে?
   -ওয়েট৷ আমি তোমাকে এর একটা কপি দিচ্ছি৷ এখন এটা পড়ো৷ আর প্রতিদিন একবার করে এটা পড়বে৷ আজ থেকে বারো বছর৷ কারণ তোমার সাথে আমার চুক্তি বারো বছরের৷ সুব্রত সবটাই জানে তাই আমি ভেবেছি তোমাকে বলেছে৷ যাই হোক করার কিছু নেই৷ নাও পড়ো৷

আমি অঞ্জনদার হাত থেকে কন্ট্রাক্ট পেপারটা নিলাম৷ এবার পড়লাম৷ আর পড়ে বসে পড়লাম নিচে৷ এসব কি লেখা? সুব্রত একবারের জন্যও আমাকে বলেনি? বারোবছরের জন্য আমাকে বিক্রি করে দিলো এর কাছে? ফেরার কোন পথ নেই আমার৷ আমি অঝোড়ে কাঁদতে লাগলাম৷ জানি বারোটা বছর এমনই যাবে৷ বারো বছরের কান্না এখন কেঁদে নিচ্ছি৷ প্রায় আধঘন্টা পর অঞ্জনদা আমাকে ধরে উঠালেন, চোখের পানি মুছে দিয়ে, এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিলেন খেতে৷ ফোন করে ড্রিংকস অর্ডার দিলেন তার জন্য হার্ড আমার জন্য সফট৷ কিন্তু আমার শরীরের মধ্যে একটা পশু জেগে উঠেছিলো সেসময়৷ বয় যখন ড্রিংকস নিয়ে আসলো আমি হার্ড ড্রিংকসগুলো এক নিঃশ্বাসে খেয়ে ফেললাম৷ জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছিলো কন্ঠনালি, খাদ্যনালী, পাকস্থলি সব কিন্তু আমি খেয়েই চলেছিলাম৷ অঞ্জনদাকে আরো অর্ডার দিতে বললাম তিনিও অর্ডার দিলেন আবারও খেলাম৷ চোখ বন্ধ করার আগমুহুর্ত মনে আছে অঞ্জনদা আমাকে আমার রুমে শুইয়ে দিয়ে দরজা আটকে দিলো৷ তবে দেখেছিলাম কন্ট্রাক্ট পেপারটা টেবিলে ওয়েট পেপার দিয়ে চাপা দিয়ে রেখেছেন তিনি৷ আমি কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানিনা৷

আর পারছি না লিখতে৷ আজও হাতটা অসাড় হয়ে আসছে৷ চোখে আগুণ জ্বলে পুড়ে কিন্তু জল আসে না৷ ডায়েরি বন্ধ করে রেখে দিলাম গোপন কুঠুরীতে৷ মগে কফি ঢাললাম৷ নরিয়াম 10mg পাঁচটা দিয়ে দিলাম গরম কফিতে৷ চুমুক দিতে দিতে অঞ্জনদাকে মেসেজ করলাম৷
    "কাল শ্যুটিং বিকেলে করেন আমি সকালে পারবো না৷ আমার ফোন বন্ধ থাকবে৷ কাউকে দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করবেন না৷ একটু ঘুমোতে চাই৷"
কফিতে চুমুক দিতে দিতে ভাবছি আর দু'টো বছর৷ তারপর আমার মুক্তি..........
চলবে......


প্রিয় পাঠক বন্ধুরা , আমি 'জান্নাতুল জান্নাত' । একজন লেখিকা। সবসময় চেষ্টা করি ভালো লেখা উপহার দেওয়া জন্য। আশা করি পড়লে আশাহত হবেন না৷ আমার লেখা নিয়ে আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানান।
ফেসবুকে আমি
sq-sample29
জান্নাতুল জান্নাত

Continue reading →
 Devil Boss - ৩য় পর্ব ( হিয়া চৌধুরি)
Hiya Chowdhury

Devil Boss - ৩য় পর্ব ( হিয়া চৌধুরি)

--- 🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃👫🏃🏃(তিশান)

--- 🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃(রিকশা না মানে রিশা)

""'''""""শুরু হইছে দৌড়াদৌড়ি""""""""

--- কিরে দাদুভাই তোরা দুজন এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন ?(তিশানের দাদু)

--- দাদু আমাকে এই রিকশার হাত থেকে বাঁচাও।(হাঁপাতে হাঁপাতে)

--- তুই আমাকে আজকে তিন তিনটি বার রিকশা বলেছিস আজকে আমি আর তোকে ছাড়বো না শয়তান 😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡

--- সরি সরি ভুল হয়ে গেছে রে আর কখনো তোকে রিকশা বলবো না।(কান্নার ভান করে। সত্যি কারের না রিকশা ধুর রিশা কে দেখানোর জন্য।😜😜😜)

--- না আমি তোর কথা বিশ্বাস করি না তুই একটা চিটিং।😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡

তিশান জানে তাকে এখন কি করতে হবে।।।।।

--- সরিরে রিশু এই দেখ কান ধরছি আর কখনো এই ভুল করবো না ক্ষমা করে দে বনু।😭😭😭

(পেত্নী রিকশার বাচ্চা ক্ষুধা লাগছে তাই আর কিছু বললাম না। তা না হলে রিকশা তোকে যে আমি কি করতাম 😡😡😡😡😡😡) মনে মনে😂😂

--- হুম যা যা মাফ করে দিলাম আমার মন অনেক বড় রে না হলে তোকে গাছের সাথে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখতাম। হুহ😏😏😏😏😏😏😏

--- (ছিঃ ছিঃ এতো অপমান। রিকশা তোকে আমি নাহ অনেক ক্ষুধা লাগছে আগে খেয়ে নেই। রিকশা কে পরে শায়েস্তা করা যাবে।) মনে মনে।

--- হুম ভাইয়া চল এবার খাবার খেয়ে নেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।

--- হুম চল।

--- আচ্ছা তিশান একটা কথা বলি?(তিশানের আম্মু)

--- হুম আম্মু বলো।

--- তানহা কে তোর কেমন লেগেছে রে খুব মিষ্টি না মেয়েটা খুব লক্ষী।😄😄😄😄😄😄😄😄

--- আম্মু😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡

--- কি হলো রে দাদুভাই এতো রেগে যাচ্ছিস কেন?

--- আম্মু,,,দাদু শুনো তোমারা ওই মেয়েটির মতো ঝগড়াটে আমি আর ২টা দেখিনি আর তোমরা কিনা বলছো মিষ্টি লক্ষী😡😡😡😡😡😡

--- কেন কি হয়েছে রে ভাইয়া তানহা আপুর সাথে ঝগড়া করেছিস নাকি?

--- আমার বয়ে গেছে ওই মেয়ের সাথে ঝগড়া করতে। ওই মেয়ে তো আস্তো একটা ঝগড়াটে। 😡😡😡😡😏😏😏😏😏😏😏আমার খাওয়া শেষ আমি উঠি🚶🚶🚶🚶🚶🚶🚶🚶

তিশান চলে যায় নিজের রুমে।

--- আম্মু এটা কি হলো ভাইয়া হঠাৎ এতো রেগে গেলো কেন?😔😔😔😔😔😔😔😔😔😔😔

--- আমি কিভাবে জানবো তুই গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখ।

--- না বাবা আমার মাইর খাওয়ার শখ নাই। আমার ও খাওয়া শেষ আমি নিজের রুমে গেলাম🚶🚶🚶🚶🚶🚶🚶🚶🚶🚶🚶🚶🚶🚶🚶

--- মনে হয় আজকে তানহা মামনি অফিসে লেট করে এসেছে তাই তিশান এতো রেগে আছে বাদ দাও ঠিক হয়ে যাবে সব।(তিশানের আব্বু)

বিকেলে...................

 ৩২ টা ফাইলের সমাধান করতে করতে তানহার নাজেহাল অবস্থা।

---- বেটা বজ্জাত আমার মতো একটা পিচ্চি মেয়েকে এতো গুলো ফাইল ধরিয়ে দিলো আমি ও এর শোধ তুলবো।হুহ আমি ও দেখবো কতো ধানে কতো চাল😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡

(তানহা কিন্তুু তিশানের উপর প্রচুর রেগে আছে। যে মেয়েটির ৫/১০ টা ফাইল সমাধান করতে পুরো রাত লেগে যেত সে কিনা ৩২ টা ফাইলের সমাধান করবে।???? ভাবা যায় এগ্লা😲😲😲😲)

এদিকে তিশান তার ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠেছে........

--- দোস্ত তুই কি এখনো আগের মতোই সিংগেল আছিস না কি ডাবল হয়ে গেছিস?(রোহান। তিশানের ফ্রেন্ড)

--- মানে??

--- কারো সাথে প্রেম করিস না? নাকি এখনো সেই আগের মতো প্রেম থেকে গুনে গুনে ১০০ হাত দূরে আছিস?

--- নারে ভাই আমার দ্বারা এসব প্রেম টেম হবে না আর GF মানে প্যারা আমি এসব প্যারা নিতে পারবো না ভাই মাফ কর।😔😔😔😔😔😔

---- এই তিশান শুন কার মনে কখন প্রেমের ঘন্টা বাজে বলা যায় না কিন্তুু সাবধানে চলা ফেরা করিস।😜😜😜😜😜😜😜😜😜😜😜😜(সাইম)

--- আমার মনে কখনো ওই সব ঘন্টা বাজবে না রে দেখে নিস তোরা।😀😀😀😀😀😀😀😀

--- 😏😏😏😏😏😏😏😏😏😏😏😏😏

আরো অনেকক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর বাসায় ফিরে যায় তিশান।

রাতে..............

তানহা কোনো রকমে ডিনার সেরে আবার সেই ৩২ টা না মানে ২২ টা ফাইল নিয়ে বসেছে। ৩২ টা মাঝে কোনো ভাবে ১০ টা ফাইলের সমাধান করেছে তানহা তাও অনেক কষ্টে।😂😂😂😂😂😂😂

তিশান ও ডিনার সেরে অফিসের কিছু ফাইল দেখছিল এমন সময় হঠাৎ একটি কাগজের দিকে চোখ যায় তিশানের কাগজ টা হাতে নিয়ে দেখে এতে অফিসের সকল স্টাপদের ফোন নাম্বার দেওয়া। তিশান কাগজ টা থেকে তানহার নাম্বার টা বের করে।

তিশান ভাবলো তানহা কে একটু রাগিয়ে দেওয়া যাক। তিশান তানহার নাম্বার টায় ফোন দেয়।আর তানহা ফোন টা রিচিভ করা মাএই তিশান কে যা বলে এতে তিশান রেগে পুরো আগুন হয়ে যায়।

(((((((((ভাবতে থাকেন তিশানের রেগে যাওয়ার কারণ  কি হতে পারে...!!!!😁😁😁)))))))))

#To_be_continue



প্রিয় পাঠক বন্ধুরা , আমি হিয়া চোধুরি। একজন লেখিকা। জানিনা কেমন লিখি আমি। তবে আশা করি আমার লেখা গল্প , উপন্যাস পড়লে আশাহত হবেন না৷ আমার লেখা নিয়ে আপনার মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানান।
আপনি চাইলে ফেসবুকে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেন !
Hiya Chowdhury - eGolpoBD
Hiya Chowdhury
Continue reading →
 Devil Boss - ২য় পর্ব ( হিয়া চৌধুরি)
Hiya Chowdhury

Devil Boss - ২য় পর্ব ( হিয়া চৌধুরি)

তানহা কেবিনে ঢুকে নতুন এমডি কে দেখে অবাক আর নতুন এমডি ও তানহা কে দেখে প্রচুর রেগে যায়।😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡

--- আ.আ.আ.আপ.আপনি এ.এখা.এখান.এখানে?

--- হুম আমি তো আপনি ই তাহলে তানহা তাবাসসুম ওরফে আমার পিএ ও না পিএ বললে ভুল হবে ঝগড়াটে পিএ।😡😡😡😡😡😡😡

--- দেখুন স্যার আমি কিন্তুু ঝগড়াটে না। আমার মতো শান্ত শিষ্ঠ একটা মেয়ে কে আপনি ঝগড়াটে বলেন আল্লাহ আপনাকে পাপ দিবে কিন্তুু।(কান্না করার ভান করে)

--- এই ঝগড়াটে মেয়ে ন্যাকামি বন্ধ করো আর শাস্তির জন্য তৈরি হও।

--- ক.ক.কিসের শা.শাস্তি স্যার??😥😥😥😥😥(এই ভয় টাই পাচ্ছিলো তানহা)

-- ১| আজকে তুমি নতুন এমডি মানে আমি আসবো জেনে ও লেট করে অফিসে আসছো আর ২| আমাকে তুই তোকারি করেছো।

--- সরি স্যার আসলে আমি বুঝতে পারিনি আংকেলের সেই বজ্জাত ছেলেটি আপনি।😭😭

--- তুমি আবার আমাকে বজ্জাত বললা😡😡😡 তোমাকে শাস্তি পেতেই হবে।

--- সরি স্যার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে এমন ভুল আর হবে না।😭😭😭😭😭😭😭😭😭😭

--- এই নাও ৩২ টা ফাইল তুমি কালকের মধ্যে সব ঠিক ঠাক করে আমায় দিবে এটা তোমার শাস্তি।

--- স্যার😭😭😭😭😭😭😭😭😭😭😭😭

--- No Excuse... because u is my PA..are you ok.?

--- জ্বী স্যার😭😭(তোর উপর ঠাডা পরবো বেডা বজ্জাত দেখে নিস তোর ১২৫ টা বাচ্চা হবে। তোর বউ আস্তো একটা শাক্ষচুন্নি  পেত্নী কাইল্লা ভুত আরো কি যেন ধুর ভুলে গেছি পরে মনে পড়লো বলবো নি সব তোর বউয়ের গুন হবে দেখবি। আমাকে শাস্তি দেওয়া না আমি ও এর শেষ দেখে ছাড়বো।হুহ ) মনে মনে।

--- আমাকে বকা দেওয়া শেষ হয়েছে?😡😡😡

--- ন.ন.না ম.মানে স্যার কিভাবে বুঝলেন?

--- তার মানে তুমি সত্যিই আমাকে বকা দিচ্ছিলে?

--- ন..না স্যার একদম না। 🏃🏃🏃🏃🏃🏃

(((দৌড়ে নিজের কেবিনে চলে আসে তানহা। কারন তানহার একটাই ভয় আরো যদি শাস্তি মানে ফাইল আরো ৩ টা বাড়িয়ে ৩৫ টা করে দেয় তাহলে তানহা কে আর পাওয়া যাবে না। কারণ কোনো কাজে তানহা একদম অলস।)))

এদিকে তানহার এমন কান্ড দেখে তিশান মনে মনে হাসতে হাসতে শেষ।

তিশানের ফোন আসে..................

তিশান তানহার কথা ভাবতে ভাবতে ফোন টার দিকে কোনো খেয়াল ই নেই ফোন টা বাজতে বাজতে কেটে যায় আবার ফোন আসে।

এবার তিশানের নজর যায় দেখে ফোন টা বেজেই চলেছে। তিশান ফোন টা রিচিভ করে.....

--- ওই ভাইয়া কি হইছেরে তোর সেই কখন থেকে ফোন দিচ্ছি ফোন টা তুললি না কেন?(রিশা তিশানের বোন)

--- সরি রে রিকশা খেয়াল করি নি তাই।

--- ভাইয়া আমি রিকশা না রিশা😡😡😡😡😡

--- ২ টাই একি জিনিস😁

--- কি বললি তুই?😡😡😡😡😡😡😡😡

--- বলছি যে কেন ফোন দিয়েছিস?

--- 😡😡😡😡😡😡😡😡😡(নিশ্চুপ)

--- আচ্ছা কিছু না বললে তাহলে ফোন টা রেখে দেই?

--- তোকে আমি পরে দেখে নিবো। (মনে মনে) অফিস থেকে ফিরার পথে আমায় ও কলেজ থেকে নিয়ে যাবি একএে বাসায় যাবো ওকে?

--- ওকে। রিকশা না মানে রিশা।😊😊😊😊😊

--- 😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡

 ফোন টা কেটে দেয় রিশা।

অফিস শেষে যে যার বাসায় চলে যায়।

বাসায়..........‌.....

--- কিরে তোর এই অবস্থা কেন?(তানহার আম্মু)

--- আর বলো না আম্মু ওই বেটা বজ্জাতের হাড্ডি আমায় ৩২ টা ফাইল ধরিয়ে দিয়েছে আর অল্পের জন্য ৩৫ টা হয় নি।😭😭😭

--- কোন বেটা বজ্জাতের হাড্ডি কি বলছিস তুই আর কিসের জন্য ৩৫ টা হয় নি মাথা ঠিক আছে তোর ওগো শুনছো আমার মেয়েটার মাথা মনে হয় গেছে।😭😭😭😭

-- আম্মু😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡

--- কি হয়েছে মামনি?(তানহার আব্বু)

--- এই তানহা তোর মাথা ঠিক আছে তো কেমন করে কথা বলছে আমার মেয়েটা এই তোর কাল থেকে আর ওই অফিসে জব করতে হবে না নিজের বাবার ও তো অফিস আছে ওই টা ছেড়ে বাবার বন্ধুর অফিসে কেন জব করতে হবে তোর হ্যাঁ বল আমায়?

--- আম্মু আমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চাই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

--- তা অন্য কারো অফিসে কেন?

--- আম্মু আমার ওই সব কাজে অাগ্রহ বেশী তাই আব্বু তুমি আম্মু কে বোঝাও আমি ফ্রেশ হতে গেলাম। ধুর এইসব আর ভালো লাগছে না 😞😞

--- আচ্ছা মামনি তুমি ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো তোমার আম্মু আর তোমাকে তোমার কাজে বাঁধা দিবে না তুমি নিজের মতো করে প্রতিষ্ঠিত হও এটা আমি ও চাই।

--- Thank you dear abbu😍😍😍😍😍😍

--- welcome my princess...

তানহা ফ্রেশ হতে চলে যায়।

(((((তানহা শিহাব চৌধুরী এর একমাত্র মেয়ে। তানহা আর তানহার আব্বু আম্মু কে নিয়েই তানহার পরিবার। তিশান,,, রিশা,,, তিশানের আব্বু আম্মু আর দাদু কে নিয়ে তিশানের পরিবার। রিশা এই বার ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ে। শিশির চৌধুরী (তিশানের আব্বু) আর শিহাব চৌধুরী (তানহার আব্বু) ছোট বেলার বন্ধু))))

--- তিশান...??

--- জ্বী আব্বু।

--- আজকে তোমার কোনো প্রবলেম হয় নি তো ?

--- না আব্বু।

--- আচ্ছা ঠিক আছে আর যদি কোনো কিছুর দরকার হয় তানহা মামনি তো আছেই সে তোমায় সাহায্য করবে।

--- ওই ঝগড়াটে মেয়েটা করবে আমাকে সাহায্য?😞😞😞😞

--- এই ভাইয়া তুই কাকে ঝগড়াটে বলছিস রে?😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡

--- আরে রিকশা ন.ন.না.না মানে...........

--- তোকে আমি😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡

--- 🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃(তিশান)

--- 🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃🏃(রিকশা না মানে রিশা)

""""""শুরু হইছে দৌড়াদৌড়ি""""""

(((((বাকিটা পরে বলবো ওরা দৌড়াদৌড়ি করুক কারণ দৌড়াদৌড়ি করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো)))))😜😜😜😜😜😜😜😜😜😜😜😜😜😜

#To_be_continue




প্রিয় পাঠক বন্ধুরা , আমি হিয়া চোধুরি। একজন লেখিকা। জানিনা কেমন লিখি আমি। তবে আশা করি আমার লেখা গল্প , উপন্যাস পড়লে আশাহত হবেন না৷ আমার লেখা নিয়ে আপনার মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানান।
আপনি চাইলে ফেসবুকে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেন !
Hiya Chowdhury - eGolpoBD
Hiya Chowdhury
Continue reading →
Devil Boss - ১ম পর্ব ( হিয়া চৌধুরি)
Hiya Chowdhury

Devil Boss - ১ম পর্ব ( হিয়া চৌধুরি)

শপিংমলে...........................

---এই কুত্তি কই তুই তোর জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি তুই কি আসবি.?

---হুম এই তো আর ২ মিনিট।

---এই শোন তোর জন্য যদি আমার অফিস মিস হয় না তোর ১২ টা বাজাবো আমি দেখে নিস।😡😡😡😡😡😡😡

---সরি রে দোস্ত। এই তো এসে গেছি।

ফোন কেটে দেয় আর তানহা। নিশিতা দৌড়ে তানহার কাছে আসে।

---সরি দোস্ত ভুল হয়ে গেছে আসলে ঘুম থেকে একটু দেরিতে উঠছি তো তাই ক্ষমা করে দে এমন ভুল আর করবো না।😥😥😥😥😥😥😥😥

--- হুম হইছে আর এতো ক্ষমা চাওয়া লাগবে না।😒😒😒😒😒😒😒😒😒😒😖😒😒😒😒

--- আচ্ছা ঠিক আছে চল এবার শপিং করে নেই।

--- হুম চল।

তানহা আর নিশিতা শপিং করা শেষ করে কথা বলতে বলতে শপিংমল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো এমন সময় তানহার সাথে কারো ধাক্কা লাগে। তানহা তো প্রচুর রেগে যায়। তানহা সামনে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে।

--- এই যে মি. চোখ কি বাসার আলমারিতে রেখে এসেছেন।?😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡

--- চোখ কি আলমারিতে রাখার জিনিস নাকি যে আলমারিতে রেখে আসবো?

--- তাহলে এভাবে কানার মতো হাটছেন কেন? দেখে শুনে চলতে পারেন না?

--- কি বললেন আমি কানা?😡😡😡😡😡😡

--- জ্বী হ্যাঁ আপনি একটা কানা শুধু কানা না আস্তো একটা দিন কানা দেখে শুনে চলতে পারেন না?

--- আপনাকে তো আমি............😡😡😡😡😡

--- এইইইই তানহা থাম থাম প্লিজ ঝগড়া করিস না।

--- কি বললি আমি ঝগড়া করি?😡😡😡😡

--- হুম আপনি তো আস্তো একটা ঝগড়াটে মেয়ে।😠😠😠😠😠😠😠😠😠😠😠😠😠😠😠

--- সয়তান তোকে আজকে আমি আলুর ভর্তা বানাবো।(তানহা)

--- এই আপনি তুই তোকারি করছেন কেন?😡😡

--- ১০০ বার করবো তাতে তোর কি বেটা বজ্জাতের হাড্ডি😡😡😡😡😡😡😡

--- 😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡

নিশিতা ওদের ঝগড়া থামাতে না পেরে বলে

--- এই তানহা তোর অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে কিন্তুু এই দেখ ১০ টা ১৫ বাজে।

--- কি বলিস হায় হায় আজকে তো তাহলে নতুন এমডির বকা খেতে হবে।😭😭😭😭😭😭😭

(তানহা কে আর পায় কে দেয় একটা দৌড়। নিশিতা আর ছেলেটি তানহার এমন দৌড় দেখে অবাক)

--- প্লিজ ভাইয়া সরি ওর হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।

--- হুম ঠিক আছে তবে আপনার ফ্রেন্ড কে সামলে রাখবেন। মাইন্ড ইট।

--- ওকে ভাইয়া।

--- (ছেলেটা চলে যায়)🚶🚶🚶🚶🚶🚶🚶🚶

«(((গল্পের নায়কের নাম তিশান চৌধুরী আর নায়িকার নাম তানহা তাবাসসুম (অনেক রাগি) একটা মেয়ে না জানি তিশানের জীবন টা কি করে ছাড়ে।)))»

অফিসে পৌঁছে..............

--- এই তানহা আজকে এতো দেরি করে আসলি কেন নতুন এমডি কিন্তুু তোর উপর খুব রেগে আছে তাড়াতাড়ি স্যারের কেবিনে যা।(আনিকা। তানহার কাজিন)

--- এইরে সেরেছে ইয়া আল্লাহ তোমার এই অধম বান্দা টাকে আজকের মতো বাঁচিয়ে দাও। "আমিন"

---  May I come in sir?

--- Yes come in.

তানহা কেবিনে ঢুকে নতুন এমডি কে দেখে অবাক আর নতুন এমডি ও তানহা কে দেখে অনেক রেগে যায়।😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡😡

#To_be_continue





প্রিয় পাঠক বন্ধুরা , আমি হিয়া চোধুরি। একজন লেখিকা। জানিনা কেমন লিখি আমি। তবে আশা করি আমার লেখা গল্প , উপন্যাস পড়লে আশাহত হবেন না৷ আমার লেখা নিয়ে আপনার মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানান।
আপনি চাইলে ফেসবুকে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেন !
Hiya Chowdhury - eGolpoBD
Hiya Chowdhury
Continue reading →

Thursday, December 12, 2019

ডায়েরি - ১ম পর্ব (জান্নাতুল জান্নাত)
eGolpo Official

ডায়েরি - ১ম পর্ব (জান্নাতুল জান্নাত)

তারিখ ২রা আগস্ট ২০১৫, স্থান: ওয়ারী চারদেয়ালের একটি স্ট্যাডি রুম৷

আমি অঞ্জনা৷ পেশায় অভিনয়শিল্পী৷ বয়স আটাশ৷ খুব কমও নয়৷ দুই বাচ্চার মা হয়েছি, সংসার সামলাতে শিখে গেছি বহু আগেই কিন্তু নিজেকে সামলানো আজও শিখে উঠতে পারিনি৷ একটা সংসার, সন্তান নারীর স্বপ্ন৷ আমারও ছিলো এই স্বপ্ন৷ ছোটবেলায় যখন পুতুল বিয়ে দিতাম তখনই ভাবতাম আমারও ছেলে মেয়ে হবে তাকে বিয়ে দিবো৷ খুব ভালো মা আর শ্বাশুড়ি হবো৷ আমার মায়ের মতো বকবো না৷ হ্যাঁ, মা হয়েছি কিন্তু ভালো মা হয়তো হতে পারিনি মানে পারছি না৷ মা হিসেবে ওদের যে পরিবেশ দেয়া উচিত তা দিতে পারছি না৷ কেন পারছি না? কেন নিজের জীবনটাকে কল্পনার জীবনের মতো সাজাতে পারছি না? আসলেই কি উপন্যাস মানুষের জীবনের মতো হয়? জীবন কেন উপন্যাসের মতো হয় না? এতোবছরের জীবনে অনেকের কাছে শুনেছি জীবনটাকে নিজের মতো সাজাও৷ তাদের কথামতো চেষ্টাও করেছি তবুও পারিনি নিজের মতো সাজাতে৷ সত্যি মনে হয় সাজানো যায় না৷ ভাগ্য তো ভাগ্যদেবতা লিখে রাখেন সেখানে আমাদের হাত কই? তেত্রিশ কোটি দেবতার নাম নিয়ে কতো পূজোই না করেছি, শুনেছিলো কি দেবতারা আমার আর্তি? শুনেনি৷ বুদ্ধি হবার পর থেকে শিবের মতো স্বামী পাওয়ার উদ্দেশ্যে পূজো করে গেলাম পেয়েছি কি শিবের মতো স্বামী? পাইনি৷ প্রতিদিন কত ফুল কত পূজো অথচ আমার ভাগ্যের শিকে আর ছিড়ে না৷ ভালো পরিবারের মেয়ে, ভালো পরিবারের বউ৷ মার্বেল পাথরে এসির ঠান্ডা হাওয়াতে ঘেরা আমার জীবন৷ কত লাইটের ফ্লাশ আমার উপরে পড়ে, মেকআপের পরতের পর পরতে ঢেকে দেয়া হয় আমার চেহারা ছোট্ট ছোট্ট গর্ত আর দাগগুলো৷ কোথাও কোন খুত নেই, শরীরের একফোটা মেদও জমতে দিতে পারিনা৷ ফিগারেই তো ব্যবসা৷

কখনো আমি শিক্ষিকা সেজে বাচ্চাদের পড়াই, কখনো ডাক্তার সেজে মানুষের ভিতর থেকে নতুন জীবন বের করার নাটক করি, কখনো পুলিশ সেজে বুলেটে ঝাঝড়া করি অপরাধীর বুক আবার কখনো অশরীরী সেজে আমার খুনীর কলিজা চিবিয়ে খাই৷ আহ্ কি তৃপ্তি তাতে!! কখনো সিল্কের শাড়ির সাথে পড়ি স্লিভলেজ ব্লাউজ যার ৯০% অংশই খোলা৷ পরিচালককে বহুবার বলেছিলাম এমন পোশাকে আমার অসস্তি হয় কিন্তু কি আর করার চুক্তিবদ্ধ যে আমি৷ শরীরের যতটা অংশ বের করে রাখা যায় ততটাই নাকি আমি আকর্ষণীয় হবো আর সাথে হবে ছবির দর্শকপ্রীতি৷ আচ্ছা দর্শক কি আসলে অভিনয় দেখে? নাকি শরীর দেখে নিজেকে উত্তেজিত করতে আসে? শরীরই যদি দেখার হয় তবে পাড়ার মেয়েরা তো কয়েকশো টাকার বিনিময়ে সব খুলে ফেলে দেয় ওখানেই তো দেখতে পারে৷ এই যা টাকার কথা বলতেই মনে পড়ে গেলো৷

তখন আমার সবে ষোলো৷ শরীরে যৌবণের আলো ঠিকরে পড়ে, লাল টমেটোর মতো গাল, হরিণীর মতো চোখ আর মেঘকালো ঘন চুলে ঢেউ খেলতো৷ সেবার পূজো আমরা পিসির বাড়িতে করেছিলাম৷ পিসতুতো দাদা অয়ন সেদিন আমাকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলো৷ কত যে মন্দির তাদের এলাকায় হিসেব করা যায় না৷ আমি মুগ্ধ নয়নে দাদার সাথে ঠাকুর দেখছি৷ হঠাৎ অনুভব করলাম কেউ আমার কোমড়ের ধার ঘেষে হাত বুলাচ্ছে সযতনে৷ কেঁপে উঠে সরে গেলাম৷
   -অয়নদা? কি করছিলে তুমি?
   -কিছু নারে৷ কি সুন্দর তোর কটিদেশ তাই ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হলো৷
   -ছিহ্ দাদা আমি না তোমার বোন?
   -তাতে কি বোকা মেয়ে৷ মেয়ে তো? বোন বলেই তো কেউ কিছু সন্দেহ করবে না৷ আয় তো কাছাকাছি দাঁড়া৷
   -না৷
দূরে দূরে থাকতে লাগলাম৷ কিছুক্ষণ পর শাড়ির মধ্যে দিয়ে হাত দিলো৷ আবার সরে গেলাম৷ চোখে ঘৃণার দৃষ্টি৷
   -দাদা আবারও?
   -এটা কিছু না৷ তুই আমাকে ধরতে দে আমি তো ৫০ টাকা দিবো৷ এখানে অনেক মেয়েরা এভাবে রোজগার করে৷ একবার ধরতে দিলে ৫০ টাকা৷ তুই যদি প্রতিদিন ১০ জনকে ধরতে দিস তোর ৫০০ টাকা হবে৷ কেউ জানবে না কিন্তু দেখ তুই কতগুলো টাকা পেয়ে যাবি৷ টাকাগুলো ইচ্ছেমতো খরচ করতে পারবি৷ কাউকে কোন কৈফিয়ত দিতে হবে না৷
   -না দাদা আমার টাকার দরকার নেই৷ আমার শরীরে হাত দিয়ে টাকা দিবে এটা আবার কেমন কথা?
   -তুই শুধু শরীরেই বড় হয়েছিস বুদ্ধিতে হোসনি৷ মেয়েদের শরীরে হাত দিয়ে ছেলেরা আনন্দ পায়৷ তাই দেয়৷ যেমনি তুই পুতুল খেলে, বই পড়ে আনন্দ পাস তেমনি৷
   -বই পড়লে পুতুল খেললে তো কারো ক্ষতি হয় না৷ অন্যের গায়ে হাত দেয়া মোটেও ভালো কাজ নয়৷ তুমি আসলে কেমন যেনো৷ আমি বাসায় যাবো৷
   -কেন রে? ঠাকুর দেখবি না?
   -না৷ আমার ইচ্ছে করছে না, সাধ মিটে গেছে৷
   -আচ্ছা চল৷
ফিরতে গিয়ে এক নির্জন স্থানে থামলো দাদা৷ জোর করে শরীরের আনাচে কানাচে হাত বুলানোর চেষ্টা করছে আর আমি প্রতিহত করছি৷ পরে বললো
   -আচ্ছা আমি তোর গায়ে হাত দিবো না কিন্তু একটা কথা দিতে হবে৷
   -কি কথা?
   -এ কথা তুই কাউকে বলবি না৷ মা বাবাকেও না, মামা মামিকেও না৷ তাহলে কিন্তু আমি একা নই আরো দশজন নিয়ে আসবো৷ কখন আসবো তুই নিজেও বুঝবি না৷
   -আচ্ছা বলবো না৷
   -মনে থাকে যেনো৷
বলে বাসায় নিয়ে গেলো৷

তারপর থেকে আর অয়ন দাদার সামনে পড়িনি আমি৷ কথাগুলোও কাউকে বলিনি কখনো৷ কি করে বলবো কোন প্রমাণ নেই যে বিশ্বাস করবে না কেউ৷ উল্টো নোংরা সমাজ আমাকেই দোষী সাব্যাস্ত করবে৷ চুপ করে থেকেছি৷ তখনও আমার মানসিকতা এতো পাকা হয়নি তাই অয়নদার সব কথা বুঝিনি৷ কেন যে হয়নি তাও জানিনা৷ আমার বয়সী মেয়েরা কতকিছু বুঝতো, কত গল্প করতো আমি শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম৷ আমার পরিপক্কতা সবার থেকে পরেই এসেছিলো৷ অনেকে বলতো আমি আমন জাতের মেয়ে৷ আমি অবাক হতাম আউশ আমন তো চালের জাত৷ আমাকে কেন আমন বলে৷ একজন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে সব মেয়ের মধ্যে পরিপক্কতা তাড়াতাড়ি আসে তাদের আউশ বলে আর যাদের দেরীতে আসে তাদের আমন বলে৷ বিষয়টা মজার ছিলো৷

পরিপক্কতা আসার পর বুঝেছিলাম দাদা কি বলেছিলো৷ তবে সেবারই ছিলো পিসির বাড়ি শেষ যাওয়া৷ একবার খবর পেয়েছিলাম পিসি খুব অসুস্থ তারপরও আমি কলেজের দোহাই দিয়ে যাইনি৷ মা বাবা গিয়ে দেখে এসেছেন৷ আমাদের বাসায় মাঝে মাঝে অয়নদা আসতো কিন্তু আমি সামনে যেতাম না৷ আমার বোকা মা'টা কিছুই সন্দেহও করেনি বুঝতেও পারেনি৷ তবে অয়নদার সাথে আমার আর দেখা হয়নি৷ পরে শুনেছিলাম আমার সকল দিদি আর বোনদের সাথে অয়নদা এমনটা করেছিলেন৷ কেউই কারো কাছে বলতো না৷ সবাই লুকিয়ে রাখতো৷ আচ্ছা কেন আমরা লুকিয়ে রেখেছি? সবাই মিলে বললে হয়তো পরিবারের অন্যরা বিশ্বাস করতো৷ বুঝিনি তখন৷

এতোক্ষণে লেখাই হয়নি অয়নদা কিন্তু বিয়ে করেছে৷ সেই রকমের একটা বউ পেয়েছে৷ সারাদিন নাকি মারের উপরে রাখে৷ আমার বড্ড ইচ্ছে হয় বৌদিকে বলি "বৌদি দাদার কিন্তু এক খাবারে পেট ভরে না৷ খবরটা জানেন তো? মাঝে মাঝে মুখরোচক কিছু দিয়েন৷" কেন যেনো আর সাহসে কুলোয় না৷ যে বৌ তিনি হয়তো বলেই বসবেন আমি তার স্বামীকে জোর করেছিলাম তিনি রাজি হয়নি বলে এইসব বানিয়ে বানিয়ে বলছি৷ তাদের আবার দু'টি মেয়েও আছে৷ আচ্ছা মেয়ে দু'টি ভালো থাকবে তো? যেসব পুরুষের কোন বাছবিচার নেই তাদের মেয়েদের চরিত্র ভগবান ভালো করবেন তো? জানিনা৷ ভগবানই ভালো জানেন৷ আমাকেও ভগবান এক ছেলে আর এক মেয়ে দিয়েছে৷ জানিনা ওদের সঠিকভাবে মানুষ করতে পারবো কিনা৷

ছোটবেলা থেকে ডায়েরি লেখার প্রচন্ড ঝোঁক আমার কিন্তু বহুবার লিখতে গিয়েও লিখতে পারিনি৷ কারণ একটাই মা'টা যেনো কেমন!! আমি কিছুই লুকিয়ে রাখতে পারতাম না৷ যখন যেখানে যা লিখতাম তাই পড়ে ফেলতো৷ গোপনীয়তা বলে কিছুই ছিলো না৷ টেবিলের ড্রয়ার, আলমারির সিন্দুক, বাবার ব্রীফকেস সব জায়গাতেই মা খুঁজতো৷ খুব বিরক্ত হতাম কেন এমন করে? আমার কোন ইচ্ছের কথা লিখতে ইচ্ছে হলেও লিখতাম না৷ তখন বেশ তালাচাবি দেয়া ডায়েরি পাওয়া যেতো৷ সেখানে মাঝে মাঝে টুকটাক লিখতাম৷ জানিনা কিভাবে সেটাও পড়ে ফেলতো৷ তারপর ড্রয়ারে তালা দিলাম৷ ওমা কি করে যেনো সে চাবিটাও হাত করলো৷ এরপর ডায়েরি লেখার সুপ্ত বাসনা মনেই লুকিয়ে রাখলাম৷ না! মা আর আমাকে লিখতে দিবে না৷

এখন আর মায়ের সংসার নেই৷ নিজের সংসার৷ আজ সকালে সূর্যোদয়ের মূহুর্তটা খুব অনুভব করেছি তখনই মনে পড়লো অঞ্জনদা আমাকে খুব সুন্দর একটি ডায়েরি উপহার দিয়েছিলেন আমার জম্মদিনে৷ ছোটবেলার সুপ্ত বাসনা জেগে উঠলো মনে৷ তবে আজ থেকেই হোক আমার ডায়েরি লেখার শুরু......

এ পর্যন্ত লিখতেই পিছন থেকে অনিতা ডাকলো৷
   -মা, দিপ্তী মাসি ফোন করেছে তোমার নাকি এগারোটায় শ্যুটিং? প্রায় সাড়ে ন'টা বাজে কখন যাবে?
   -হ্যাঁ এখনই যাবো৷ তুই যা৷
মেয়েকে সরিয়ে দরজা আটকে দিলাম৷ ডায়েরির কথাটা ওকে জানতে দেয়া যাবে না৷ এ ঘরে আমি একটা গোপন কুঠুরী করিয়েছি৷ কাউকে না বললে কেউ সেটা বের করতে পারবে না৷ সেখানেই ডায়েরিটা লুকিয়ে রেখে বেরিয়ে পড়লাম রুম থেকে৷ গন্তব্য শ্যুটিং স্পট৷




#ডায়েরি উপন্যাসটি আমার দীর্ঘ ছয়মাস বিরতির পর লেখা৷ কিছু লেখা লিখে আত্মতৃপ্তি হয় এটা তেমনই একটা উপন্যাস৷ #ট্রাপিজিয়াম এর পর এটা আমার সবচেয়ে বেশি মন কেড়েছে৷ আশা করি পড়লে আশাহত হবেন না৷ পুরো উপন্যাসটি একবারে পড়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। আশা করি ভালো লাগবে। উপন্যাসটি নিয়ে আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে জানান। ধন্যবাদ !
sq-sample29
জান্নাতুল জান্নাত
Continue reading →